
জাতিগত দূর্ভাগ্যের খন্ডচিত্র
আজকে সারাদিনে সোশ্যাল মিডিয়াতে তারেক রহমানের বিভিন্ন নিউজ কাটিং এর পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ , কীভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা একটি জাতি লুণ্ঠনের লাইসেন্সে পরিণত হয়েছিল তার একটি বিস্তৃত কেস স্টাডি
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করত তাদের একটি পছন্দ আছে। প্রতিটি নির্বাচনী মৌসুমে তাদের বলা হতো দুটি দলের মধ্যে একটি বেছে নিতে—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং আওয়ামী লীগ। একটি প্রতিশ্রুতি দিত নিরাপত্তার, অন্যটি উন্নয়নের। একটি জড়িয়ে ছিল জাতীয়তাবাদে, অন্যটি মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারে।
কিন্তু বক্তৃতা ও সমাবেশের আড়ালে, উভয় দলই একটি সাধারণ দর্শনে বিশ্বাসী ছিল: ক্ষমতা বিদ্যমান যারা তা ধারণ করে তাদের সমৃদ্ধ করার জন্য।
এটি নায়ক এবং খলনায়কের গল্প নয়। এটি দুটি অপরাধী সংগঠনের গল্প যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল, প্রতিটি পালাক্রমে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির একটিকে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করেছে। একমাত্র প্রশ্ন যা অবশিষ্ট থাকে: কোনটি আরও খারাপ ছিল?
প্রথম অঙ্ক: চাঁদাবাজরা (২০০১-২০০৬)
দৃশ্য ১: হাওয়া ভবন – ছায়া সরকার
ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ছিল একটি সাধারণ ভবন যা দুর্নীতির প্রতীক হয়ে উঠবে—হাওয়া ভবন (আকাঙ্ক্ষার ঘর)। এটি কোনো সরকারি অফিস ছিল না। এর কোনো সাংবিধানিক ম্যান্ডেট ছিল না। তবুও ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এটি বাংলাদেশের প্রকৃত ক্ষমতার আসন হিসেবে কাজ করেছে।
তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র, এখানে প্রতিদিন দরবার করতেন। তিনি কখনো নির্বাচিত পদে ছিলেন না। তাঁকে কখনো কোনো পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবুও বাংলাদেশের প্রতিটি বড় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর আশীর্বাদ প্রয়োজন ছিল—এবং তাঁর ভাগ।
ব্যবস্থা: সহজ, ও দ্রুত কার্যকর।
সরকারি চুক্তি চান? হাওয়া ভবনে টাকা দিন। আমদানি লাইসেন্স দরকার? হাওয়া ভবনে টাকা দিন। নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা? হাওয়া ভবনে টাকা দিন। চান পুলিশ একটি অপরাধের তদন্ত করুক? হাওয়া ভবনে টাকা দিন। চান পুলিশ একটি অপরাধ উপেক্ষা করুক? দ্বিগুণ টাকা দিন।
দৃশ্য ২: ব্যবসায়ীর দুর্দশা
৮ মার্চ, ২০০৭ – আজম আহমেদের সাক্ষ্য:
আজম আহমেদ, একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী, তদন্তকারীদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ করলেন যা সবাই জানত কিন্তু কেউ বলার সাহস করত না: “তারা ১ কোটি টাকা দাবি করেছিল। আমি দিয়েছি। আমার কোনো বিকল্প ছিল না।”
তাঁর অপরাধ? বৈধ উপায়ে একটি সরকারি টেন্ডার জেতা। তাঁর শাস্তি? হাওয়া ভবন থেকে একটি ফোন কল “কমিশন” দাবি করে।
৯ এপ্রিল, ২০০৭ – আবদুল মোনেম লিমিটেড:
আরেক উদ্যোক্তা, আরেক চাঁদাবাজি: নিজের দেশে ব্যবসা করার “সুবিধার” জন্য ১০.৩১ কোটি টাকা দাবি।
সিমেন্স কানেকশন:
এমনকি আন্তর্জাতিক দৈত্যরাও রেহাই পায়নি। জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং কনগ্লোমারেট সিমেন্স নীরবে বাংলাদেশে প্রতিটি চুক্তিতে ২% কমিশন দিয়েছে। টাকা প্রবাহিত হয়েছে একটি জায়গায়: তারেক রহমানের নেটওয়ার্কে।
স্কেল: পাঁচ বছরে, নথিভুক্ত হাওয়া ভবন চাঁদাবাজি প্রমাণিত মামলায় ৫-১০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রকৃত সংখ্যা? সম্ভবত ১০-২০ গুণ বেশি।
দৃশ্য ৩: যখন বিদেশী শক্তি মনোযোগ দিল
নিকো ঘটনা – দুর্নীতির একটি কেস স্টাডি:
২০০৩ সালে, কানাডিয়ান এনার্জি কোম্পানি নিকো রিসোর্সেস বাংলাদেশ থেকে কিছু চেয়েছিল: একটি গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তি এবং একটি বিশাল গ্যাস ক্ষেত্র বিস্ফোরণের পর ক্ষতিপূরণ দাবি থেকে অনাক্রম্যতা।
ঘুষ:
- একটি বিলাসবহুল গাড়ি: CAD ১৯০,৯৮৪
- নগদ: USD ৫,০০০
- পরিবারের জন্য ভ্রমণ খরচ
- প্রাপক: প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন
মোড়: ২০১১ সালে, নিকো একটি কানাডিয়ান আদালতে দোষ স্বীকার করে। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (RCMP), FBI, এবং বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন সবাই নিশ্চিত করেছে: এটি একবারের পেমেন্ট ছিল না। এভাবেই ব্যবসা হতো।
দৃশ্য ৪: দাতব্য কেলেঙ্কারি
সবচেয়ে নিষ্ঠুর অপরাধ:
তারেক রহমান যখন কর্পোরেশন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করছিলেন, তখন তাঁর মা খালেদা জিয়া এতিমদের কাছ থেকে চুরি করছিলেন।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলা: এটি রাজনৈতিক ও ভুয়া মামলা হিসাবে বিতর্ক রয়েছে।
- আত্মসাৎ করা পরিমাণ: ৩.১৫ কোটি টাকা
- উৎস: এতিমদের জন্য দাতব্য তহবিল
- পদ্ধতি: পরিবারের অ্যাকাউন্টে তহবিল স্থানান্তর
- সাজা: ১০ বছরের কারাদণ্ড (২০১৮)
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা:
- পরিমাণ: ২.১৪ কোটি টাকা ($২৫০,০০০)
- উদ্দেশ্য: দরিদ্রদের জন্য অর্থ দলীয় অফিসের জন্য জমি কিনতে ব্যবহৃত
- সাজা: ৫ বছরের কারাদণ্ড (২০১৮)
অন্ধকার বিদ্রূপ: বাংলাদেশের প্রথম মহিলা, এতিম চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত। ( ভুয়া রাজনৈতিক মামলা হিসাবে আলোচিত)
দৃশ্য ৫: সিঙ্গাপুর সংযোগ
FBI বিশেষ এজেন্ট ডেব্রা লাপ্রেভোট – নভেম্বর ২০১১ সাক্ষ্য:
একজন আমেরিকান ফেডারেল এজেন্ট একটি বাংলাদেশী আদালতে দাঁড়িয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করলেন যা একটি কার্যকরী গণতন্ত্রে যে কোনো সরকারকে ধ্বংস করে দিত:
“তারেক রহমান তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর সিটিব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি টাকার বেশি স্থানান্তর করেছেন। এটি মানি লন্ডারিং।”
প্রমাণ:
- সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাংক রেকর্ড
- ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার ডকুমেন্টেশন
- FBI নজরদারি রিপোর্ট
- আন্তর্জাতিক আর্থিক গোয়েন্দা তথ্য
পরিণাম: তারেক রহমান ২০০৮ সালে লন্ডনে পালিয়ে যান। তিনি আর কখনও ফিরে আসেননি। টাকা কখনও উদ্ধার হয়নি।
দৃশ্য ৬: অস্ত্র চোরাচালান কেলেঙ্কারি
২ এপ্রিল, ২০০৪ – চট্টগ্রাম বন্দর:
কাস্টমস কর্মকর্তারা এমন কিছু আবিষ্কার করলেন যা একটি আন্তর্জাতিক সংকট সৃষ্টি করবে: ১০টি ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ বোঝাই, বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে চোরাচালান করা।
গন্তব্য: ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী (ULFA)
প্রভাব: বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান, মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, প্রতিবেশী দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য অস্ত্র পাচারে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
দৃশ্য ৭: গ্রেনেড হামলা
২১ আগস্ট, ২০০৪ – বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা:
একটি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সমাবেশ। মঞ্চে বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তারপর—বিস্ফোরণ।
ক্ষয়ক্ষতি:
- ২৪ জন নিহত
- ৩০০+ আহত
- শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে যান
মাস্টারমাইন্ড: ২০১৮ সালে, আদালত তারেক রহমানকে এই সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
বাস্তবতা: একজন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র রাজনৈতিক বিরোধীদের ভিড়ে গ্রেনেড নিক্ষেপের আদেশ দিয়েছিলেন।
বিরতি: বিএনপির লুণ্ঠনের মাপকাঠি
পাঁচ বছরের পরিকল্পিত লুট (২০০১-২০০৬):
- নথিভুক্ত চাঁদাবাজি: $৫-১০ মিলিয়ন
- সিঙ্গাপুর মানি লন্ডারিং: $৩০-৫০ মিলিয়ন
- দাতব্য তহবিল আত্মসাৎ: $৫ মিলিয়ন
- জমি দখলের লাভ: $৫০-১০০ মিলিয়ন
- ঘুষ ও কমিশন: $১০-২০ মিলিয়ন
- চাকরি বিক্রয় চক্র: $২০-৫০ মিলিয়ন
- অনথিভুক্ত পরিকল্পিত দুর্নীতি: $৫০০ মিলিয়ন – $১ বিলিয়ন
মোট বিএনপি দুর্নীতি (২০০১-২০০৬): $১-২ বিলিয়ন বার্ষিক গড়: $২০০-৪০০ মিলিয়ন
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল র্যাঙ্কিং: বাংলাদেশ টানা ৫ বছর (২০০১-২০০৫) বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ছিল।
দ্বিতীয় অঙ্ক: পরিশীলিত লুট রানী (২০০৯-২০২৪)
দৃশ্য ১: একটি নতুন শুরু নাকি একটি নিখুঁত অপরাধ?
জানুয়ারি ২০০৯: শেখ হাসিনা “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এবং অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশাবাদী ছিল। বিশ্বব্যাংক বিলিয়ন বিলিয়ন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত ছিল।
কেউ কল্পনাও করেনি যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে পরিশীলিত, পরিকল্পিত এবং ধ্বংসাত্মক লুণ্ঠন দেখতে চলেছে—একটি ১৫ বছরের লুট যা তারেক রহমানের হাওয়া ভবনকে পাড়ার সুরক্ষা চক্রের মতো দেখাবে।
দৃশ্য ২: শতাব্দীর ব্যাংকিং ডাকাতি
হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি (২০১০-২০১২):
কল্পনা করুন একটি ব্যাংকে ঢুকে $৪৫৪ মিলিয়ন চাওয়া। এখন কল্পনা করুন ব্যাংক “হ্যাঁ” বলছে এবং কোনো প্রশ্ন করছে না।
পদ্ধতি:
- হলমার্ক গ্রুপ: ২৭ বিলিয়ন টাকা প্রাপ্ত
- নথি: সব জাল
- ব্যাংক কর্মকর্তা: সবাই জড়িত
- রাজনৈতিক সুরক্ষা: শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কথিতভাবে জড়িত
মোড়: যখন অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিতের মুখোমুখি হওয়া হয়, তিনি কাঁধ ঝাঁকান: “এটি কোনো বড় ব্যাপার নয়।”
মাপকাঠি: একটি একক রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে $৪৫৪ মিলিয়ন চুরি। সাতজন কর্মকর্তা ১৭ বছর পেয়েছেন। টাকা? কখনো উদ্ধার হয়নি।
দৃশ্য ৩: শেয়ারবাজার গণহত্যা
২০১১ – যে বছর স্বপ্ন মরে গিয়েছিল:
বাংলাদেশের লাখো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী গল্পে বিশ্বাস করেছিল: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করুন, সমৃদ্ধ হন, আপনার ভবিষ্যৎ গড়ুন।
বাস্তবতা: বাজার কারসাজি করা হয়েছিল।
কারসাজি:
- শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো
- ক্ষমতাবান অভিজাতদের দ্বারা ইনসাইড ট্রেডিং
- নিয়ন্ত্রক বন্দী করা
- মিডিয়া কারসাজি
পতন:
- ২০০ বিলিয়ন টাকা বাষ্পীভূত ($২.৫ বিলিয়ন)
- কারসাজির মাধ্যমে সরাসরি ১৫০ বিলিয়ন টাকা চুরি
- হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস
- একাধিক আত্মহত্যা
পরিণাম: তদন্ত কমিটি গঠন। রিপোর্ট জমা। অপরাধীদের চিহ্নিত। বিচার? শূন্য।
দৃশ্য ৪: বেসিক ব্যাংক – যখন অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন
৮ জুলাই, ২০১৫ – সংসদ:
একটি অসাধারণ মুহূর্তে, অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত স্বীকার করলেন: “বেসিক ব্যাংকে বিশাল আত্মসাৎ ঘটেছে। প্রাক্তন চেয়ারমান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু জড়িত।”
পরিমাণ: ৪৫ বিলিয়ন টাকা ($৫৬২ মিলিয়ন)
অভিযুক্ত: শেখ আবদুল হাই বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা এবং ব্যাংক চেয়ারমান।
বিচার: মন্ত্রীর স্বীকারোক্তি এবং অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ সত্ত্বেও—কখনও কোনো মামলা হয়নি।
বার্তা: আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে, স্বীকারোক্তি + প্রমাণ + অর্থমন্ত্রীর সাক্ষ্য = অনাক্রম্যতা।
দৃশ্য ৫: ডেসটিনি গ্রুপ – পিরামিড স্কিম
২০১২ – প্রতিশ্রুতি:
ডেসটিনি গ্রুপ বাংলাদেশীদের একটি স্বপ্ন দিয়েছিল: টাকা বিনিয়োগ করুন, গ্যারান্টিযুক্ত রিটার্ন পান, সমৃদ্ধি অর্জন করুন।
বাস্তবতা: ক্লাসিক পিরামিড স্কিম।
মাপকাঠি:
- ৪১.১৯ বিলিয়ন টাকা ($৫১৫ মিলিয়ন) সংগৃহীত
- বিভিন্ন রিপোর্ট: $৯০০ মিলিয়ন একাধিক দেশে পাচার
- লাখো শিকার
রাজনৈতিক সংযোগ:
- রফিকুল আমিন, কোম্পানির চেয়ারমান, আওয়ামী লীগের গভীর সংযোগ ছিল
- কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর জানত
- শুধুমাত্র পতন অনিবার্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়
দৃশ্য ৬: পরিকল্পিত ব্যাংকিং খাত গণহত্যা
আগস্ট ২০২৫ তদন্ত রিপোর্ট:
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন একটি অভূতপূর্ব অপরাধ তদন্ত শুরু করে: পুরো ব্যাংকিং খাতের পরিকল্পিত লুট।
তদন্তাধীন:
- ৬টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক সম্পূর্ণভাবে আপস
- ১৮টি বেসরকারি ব্যাংক বড় ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে
- বোর্ড চেয়ারম্যান, পরিচালক, এমডি সবাই তদন্তাধীন
প্রধান খেলোয়াড়:
বেক্সিমকো গ্রুপ (সালমান এফ রহমান – আওয়ামী লীগ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা):
- পাচারকৃত পরিমাণ: ৫০০ বিলিয়ন টাকা
- পদ্ধতি: ঋণ যা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না
- সুরক্ষা: প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি প্রবেশাধিকার
- মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ: ইনডিপেনডেন্ট টিভির মালিক
- আন্তর্জাতিক সম্পদ: লন্ডন, সিঙ্গাপুরে ফ্ল্যাট
এস আলম গ্রুপ:
- অবস্থা: সবচেয়ে বড় ব্যাংকিং জালিয়াতির অপরাধী
- পদ্ধতি: একাধিক ব্যাংকের সম্পূর্ণ দখল
- রাজনৈতিক সংযোগ: শেখ হাসিনার সবচেয়ে কাছের সহযোগী
- মাপকাঠি: ব্যাংকগুলি ব্যক্তিগত এটিএম হিসাবে ব্যবহৃত
বসুন্ধরা গ্রুপ:
- ঋণ: ৩৫০+ বিলিয়ন টাকা
- প্রকৃতি: অকার্যকর, সম্ভবত কখনও পুনরুদ্ধার করা হবে না
- সুরক্ষা: মিডিয়া সাম্রাজ্য + রাজনৈতিক সংযোগ
উদ্ভাবন: এটি ডাকাতি ছিল না। এটি ছিল প্রাতিষ্ঠানিক দখল। সম্পূর্ণ ব্যাংকগুলি রাজনৈতিকভাবে সংযুক্তদের ব্যক্তিগত গল্লকে রূপান্তরিত হয়েছে।
দৃশ্য ৭: রূপপুর পারমাণবিক প্ল্যান্ট – $৫ বিলিয়ন প্রশ্ন
প্রকল্প খরচ: $১২.৬৫ বিলিয়ন কথিত আত্মসাৎ: $৫ বিলিয়ন (মোটের ৪০%) অংশীদার: রাশিয়া (Rosatom)
পদ্ধতি:
- চুক্তি মুদ্রাস্ফীতি
- প্রতিটি চুক্তিতে কমিশন
- পরামর্শক ফি কারসাজি
- সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কিকব্যাক
মাপকাঠি: একটি একক প্রকল্পের দুর্নীতি বিএনপির সম্পূর্ণ পাঁচ বছরের মোট অতিক্রম করেছে।
দৃশ্য ৮: পদ্মা সেতু – যখন বিশ্বব্যাংক “না” বলল
২০১২ – আন্তর্জাতিক কেলেঙ্কারি:
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো প্রকল্পে $১.২ বিলিয়ন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত ছিল। তারপর তারা কিছু আবিষ্কার করে।
আবিষ্কার: “চুক্তি পুরস্কার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ”
অভিযুক্ত:
- সৈয়দ আবুল হোসেন (যোগাযোগমন্ত্রী) – ২৩ জুলাই, ২০১২ পদত্যাগ
- আবুল হাসান চৌধুরী (প্রতিমন্ত্রী)
- মুজিবুর রহমান চৌধুরী (শেখ হাসিনার ভাগনে, এমপি)
- SNC-Lavalin (কানাডিয়ান নির্মাণ দৈত্য)
বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত: তহবিল সম্পূর্ণ প্রত্যাহার
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া:
- দুদক তদন্ত: ৫৩ দিন, কাউকে দোষী পায়নি
- সব ৭ কর্মকর্তা খালাস
- “বিদেশীদের ষড়যন্ত্র” ঘোষণা
ফলাফল: বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল দিয়ে সেতু নির্মাণ করেছে। এটি জুন ২০২২ সালে খোলা হয়। দুর্নীতির প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
দৃশ্য ৯: আশ্রয়ণ হাউজিং কেলেঙ্কারি
প্রতিশ্রুতি: গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আবাসন
বাস্তবতা: শিল্প-স্কেল মূল্য মুদ্রাস্ফীতি
গ্রিন সিটি প্রজেক্ট উদাহরণ (২০১৯):
- একটি বালিশের বাজার মূল্য: ২৫০-৩০০ টাকা
- নথিভুক্ত মূল্য: ৫,৯৫৭ টাকা (২০x মার্কআপ)
- প্রতি বালিশ পরিবহন: ৯৩১ টাকা
- মোট কথিত আত্মসাৎ: ২১০,০০০ কোটি টাকা ($২১ বিলিয়ন)
পদ্ধতি: প্রতিটি একক আইটেম বাজার মূল্যের ১০-২০x এ সংগ্রহ করা, প্রতিটি মার্কআপ কর্মকর্তাদের কিকব্যাক প্রতিনিধিত্ব করে।
দৃশ্য ১০: বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি (২০১৬)
ফেব্রুয়ারি ২০১৬ – ডিজিটাল ডাকাতি:
হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের SWIFT সিস্টেম লঙ্ঘন করে এবং নিউইয়র্কের দেশের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় $১ বিলিয়ন চুরি করার চেষ্টা করে।
চুরি পরিমাণ: $১০১ মিলিয়ন (বাকিটা থামানোর আগে)
তদন্ত:
- আন্তর্জাতিক সাইবার ক্রাইম সিন্ডিকেট
- বাংলাদেশ থেকে ভিতরের সাহায্য
- ফিলিপাইনস ক্যাসিনোর মাধ্যমে টাকা পাচার
- উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের সাথে সংযোগের অভিযোগ
বিব্রতকরতা: একটি সম্পূর্ণ জাতির কেন্দ্রীয় ব্যাংক হ্যাক হয়েছে। গভর্নর পদত্যাগ করেন। টাকা সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার হয়নি।
দৃশ্য ১১: পারিবারিক সাম্রাজ্য
নভেম্বর ২০২৪ – দুদক তদন্ত:
আগস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, তদন্তকারীরা পরিবারের সম্পদ সঞ্চয়ের পরিমাণ উন্মোচন করতে শুরু করে।
কথিত অবৈধ সম্পদ: শত শত হাজার কোটি টাকা
সন্দেহজনক পাচারকৃত টাকা:
- ৮০০ বিলিয়ন টাকা
- $৩০০ মিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা
তদন্তাধীন:
- শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)
- সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র, আইসিটি উপদেষ্টা)
- সায়মা ওয়াজেদ (কন্যা, WHO আঞ্চলিক পরিচালক)
- শেখ রেহানা (বোন)
- টিউলিপ সিদ্দিকী (ভাগনি, ইউকে সংসদ সদস্য – কেলেঙ্কারির মধ্যে পদত্যাগ)
- একাধিক অন্যান্য পরিবারের সদস্য
চিহ্নিত সম্পত্তি:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: একাধিক সম্পত্তি
- যুক্তরাজ্য: টিউলিপ সিদ্দিকীর নামে কয়েকটি ফ্ল্যাট
- মালয়েশিয়া: সম্পত্তি
- সিঙ্গাপুর: একাধিক সম্পত্তি
- হংকং: সম্পদ
- কেম্যান আইল্যান্ডস: অফশোর হোল্ডিং
- দুবাই, সাইপ্রাস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, হাইতি, ভারত, চীন, রাশিয়া: বিনিয়োগ
উদ্ভাবন: এটি একটি অপরাধী পরিবার ছিল না। এটি ছিল একটি অপরাধী রাজবংশ যা একটি বহুজাতিক কর্পোরেশনের মতো পরিচালনা করছে, অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া প্রতিটি মহাদেশে শাখা সহ।
তৃতীয় অঙ্ক: মানবিক মূল্য
দৃশ্য ১: ক্রসফায়ার – মৃত্যুদণ্ড শিল্প
২০০৯-২০২৪ হিসাব:
- বিচারবহির্ভূত হত্যা: ১,৯২৬ জন
- বার্ষিক গড়: ১২৮ জন
- পদ্ধতি: “ক্রসফায়ার,” “এনকাউন্টার,” “বন্দুকযুদ্ধ”
- যথাযথ প্রক্রিয়া: শূন্য
- তদন্ত: কোনো নেই
- বিচার: কোনো নেই
ব্যবস্থা: ১. ব্যক্তি অভিযুক্ত (প্রায়শই প্রমাণ ছাড়া) ২. RAB বা পুলিশ তাকে “গ্রেফতার” করে ৩. পরের সকালে: “বন্দুকযুদ্ধ”-এর খবর ৪. পরিবারকে লাশ দেওয়া হয় ৫. মামলা বন্ধ
বাস্তবতা: রাষ্ট্র-অনুমোদিত হত্যা রুটিন হয়ে গিয়েছিল।
দৃশ্য ২: জোরপূর্বক অপহরণ – ভূতের ব্যবস্থা
২০০৯-২০১৭ নথিভুক্ত মামলা: ৪০২ জন নিখোঁজ
পদ্ধতি: ১. সাদা পোশাকের লোকেরা আসে ২. বাড়ি/রাস্তা থেকে ব্যক্তিকে নিয়ে যায় ৩. কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই ৪. হেফাজতের কোনো স্বীকৃতি নেই ৫. পরিবার হাসপাতাল, মর্গ, কারাগার খোঁজে ৬. বেশিরভাগ আর কখনো দেখা যায় না
এখনও নিখোঁজ (২০২৪): ৮৬ জন
বার্তা: সরকারের বিরোধিতা মানে আপনি কেবল অস্তিত্বহীন হতে পারেন।
দৃশ্য ৩: জুলাই-আগস্ট ২০২৪ – ছাত্র অভ্যুত্থান
স্ফুলিঙ্গ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
প্রতিক্রিয়া: ছাত্রদের বিরুদ্ধে লাইভ গোলাবারুদ
ক্ষয়ক্ষতি:
- মৃত্যু: ১,০০০+ (বেশিরভাগ ছাত্র)
- আহত: হাজার হাজার
- পদ্ধতি: পুলিশ, RAB, সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ক্যাডার
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়: “মর্মান্তিক সহিংসতা” অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল: “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” বৈশ্বিক মিডিয়া: “গণহত্যা”
ফলাফল: এই বর্বরতা শাসনের অবসান ঘটায়। ৫ আগস্ট, ২০২৪-এ, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
দৃশ্য ৪: আবরার ফাহাদ – যে ফেসবুক পোস্ট হত্যার দিকে পরিচালিত করেছিল
৭ অক্টোবর, ২০১৯ – বুয়েট ক্যাম্পাস:
আবরার ফাহাদ, একজন মেধাবী প্রকৌশল শিক্ষার্থী, ভারত-বাংলাদেশ পানি চুক্তির সমালোচনা করে একটি ফেসবুক পোস্ট লিখেছিলেন।
৬ ঘণ্টা পরে:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (আওয়ামী লীগের ছাত্র শাখা) সদস্যরা:
- তাকে হলের নির্যাতন কক্ষে নিয়ে যায়
- ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে মারধর করে
- সে তার জীবনের জন্য অনুরোধ করে
- তারা তার মৃত্যু পর্যন্ত চালিয়ে যায়
জনগণের প্রতিক্রিয়া:
সারা বাংলাদেশে ক্ষোভ। বর্বরতা অনস্বীকার্য ছিল।
সরকারের প্রতিক্রিয়া:
প্রাথমিক গ্রেফতার, তারপর বিলম্ব, তারপর পাতলা। বার্তা স্পষ্ট ছিল: ভারতের সমালোচনা করুন, এটি আপনার ভাগ্য।
দৃশ্য ৫: বিশ্বজিৎ দাস – দিনের আলোতে কুপিয়ে হত্যা
৯ ডিসেম্বর, ২০১২ – ঢাকার রাস্তা:
২৪ বছর বয়সী দর্জি বিশ্বজিৎ দাস বিএনপি-ডাকা ধর্মঘটের সময় বাড়ি ফিরছিলেন।
হামলা:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মীরা:
- তাকে বিরোধী সমর্থক ভেবে ভুল করেছিল
- রাস্তায় তাকে তাড়া করে
- চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা
- লোহার রড, হকি স্টিক দিয়ে মারধর
- “ছাত্র নেতাদের” ভিড় অংশগ্রহণ করছে
প্রমাণ:
একাধিক উৎস দ্বারা ছবি এবং ভিডিও করা। দিনের আলোতে। শত শত সাক্ষী।
প্রতীক:
এটি রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল না। এটি একটি শিকার দল ছিল। ছাত্ররা মৃত্যু স্কোয়াডে রূপান্তরিত হয়েছিল, রাজনৈতিক সুরক্ষা দ্বারা ক্ষমতায়িত।
চতুর্থ অঙ্ক: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
সংখ্যা মিথ্যা বলে না
| মেট্রিক | বিএনপি (২০০১-২০০৬) | আওয়ামী লীগ (২০০৯-২০২৪) | অনুপাত |
|---|---|---|---|
| সময়কাল | ৫ বছর | ১৫ বছর | ৩x |
| মোট দুর্নীতি | $১-২ বিলিয়ন | $১৫০-২৩৪ বিলিয়ন | ১১৭-২৩৪x |
| বার্ষিক গড় | $২০০-৪০০ মিলিয়ন | $১০-১৫.৬ বিলিয়ন | ৪০-৭৮x |
| সবচেয়ে বড় একক কেলেঙ্কারি | $৫০ মিলিয়ন | $৫ বিলিয়ন | ১০০x |
| ব্যাংকিং খাত | ন্যূনতম | $৩০-৫০ বিলিয়ন | অসীম |
| বিচারবহির্ভূত হত্যা | সীমিত নথিভুক্তকরণ | ১,৯২৬ নথিভুক্ত | – |
| জোরপূর্বক অপহরণ | সীমিত নথিভুক্তকরণ | ৪০২ নথিভুক্ত | – |
| জনপ্রতি চুরি | $৭-১৪ | $৯০০-১,৪০০ | ১০০x |
পদ্ধতি – একটি তুলনা
বিএনপি স্টাইল: রাস্তার গুন্ডা
- হাওয়া ভবনের মাধ্যমে সরাসরি চাঁদাবাজি
- অসভ্য কমিশন নেওয়া
- ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি
- দৃশ্যমান দুর্নীতি
- সীমিত পরিশীলিততা
- একক কমান্ড সেন্টার (তারেক রহমান)
আওয়ামী লীগ স্টাইল: কর্পোরেট রেডার
- সম্পূর্ণ ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রাতিষ্ঠানিক দখল
- মেগা-প্রজেক্ট কমিশন স্কিম
- ব্যবসায়িক সমষ্টির অংশীদারিত্ব
- রাষ্ট্র-অনুমোদিত লুট
- পরিশীলিত আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং
- বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো সঙ্গে পারিবারিক এন্টারপ্রাইজ
- ক্ষতিপূরণ আইনের মাধ্যমে আইনি সুরক্ষা
- ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মিডিয়া দমন
উত্তরাধিকার
বিএনপির উত্তরাধিকার (২০০১-২০০৬):
- রাজনৈতিক দুর্নীতি স্বাভাবিক করেছে
- চাঁদাবাজি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করেছে
- রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি করেছে
- কিন্তু: প্রতিষ্ঠান টিকে আছে
- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল
- অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব
- আন্তর্জাতিক তদন্ত নথিভুক্ত অপরাধ
আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকার (২০০৯-২০২৪):
- প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে – পুনর্নির্মাণে বছর লাগবে
- ব্যাংকিং সিস্টেম ভেঙে পড়েছে – পুনরুদ্ধার অনিশ্চিত
- ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বোঝা বিশাল জনসাধারণের ঋণ
- গভীর সামাজিক বিভাজন
- একটি প্রজন্মকে প্রভাবিত করা ট্রমা এবং ভয়
- অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কয়েক দশক লাগতে পারে
- গণতান্ত্রিক নিয়ম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে
- সম্পূর্ণ প্রজন্ম কর্তৃত্ববাদী শাসন অনুভব করেছে
পঞ্চম অঙ্ক: রায়
প্রশ্ন: কে আরও দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল?
প্রতিটি পরিমাপযোগ্য মেট্রিক দ্বারা: আওয়ামী লীগ
প্রমাণ:
পরিমাণগত:
- ১১৭-২৩৪ গুণ বেশি টাকা চুরি
- ৪০-৭৮ গুণ উচ্চতর বার্ষিক হার
- ১০০ গুণ বড় একক কেলেঙ্কারি
- পরিকল্পিত বনাম সুবিধাবাদী দুর্নীতি
গুণগত:
- বিএনপি একটি চাঁদাবাজি চক্র চালিয়েছিল যা ব্যক্তিদের সমৃদ্ধ করেছিল
- আওয়ামী লীগ একটি লুটতরাজমূলক রাষ্ট্র চালিয়েছিল যা জাতিকে লুট করেছিল
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ:
আওয়ামী লীগের ২০০৯-২০২৪ দুর্নীতি এই ঐতিহাসিক লুটতরাজমূলক শাসনের সাথে তুলনা করে:
১. ফার্দিনান্দ মার্কোস (ফিলিপাইন): $৫-১০ বিলিয়ন (২০ বছর) ২. সুহার্তো (ইন্দোনেশিয়া): $১৫-৩৫ বিলিয়ন (৩২ বছর) ৩. মোবুতু সেসে সেকো (জায়ার): $৫ বিলিয়ন (৩২ বছর) ৪. স্লোবোদান মিলোশেভিচ (সার্বিয়া): $১ বিলিয়ন (১৩ বছর)
আওয়ামী লীগ (বাংলাদেশ): $১৫০-২৩৪ বিলিয়ন (১৫ বছর)
সমন্বিত তুলনা:
এমনকি জিডিপি এবং সময়কালের জন্য সমন্বয় করে:
- বিএনপি: মোট জিডিপির ~২-৪% (৫ বছরে)
- আওয়ামী লীগ: মোট জিডিপির ~৪-৬% (১৫ বছরে)
সমন্বয়ের পর, আওয়ামী লীগ দুর্নীতি এখনও পরম পদে ২০-৪০ গুণ বড় এবং জিডিপি-সমন্বিত পদে ২-৩ গুণ বড়।
উপসংহার: দুর্নীতির দুই মুখ
চূড়ান্ত সত্য:
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয়ই বাংলাদেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। উভয়ই জবাবদিহিতার যোগ্য। উভয়ই রাজনৈতিক দুর্নীতির সবচেয়ে খারাপ প্রতিনিধিত্ব করে।
কিন্তু:
বিএনপির দুর্নীতি একটি অপরাধ ছিল।
আওয়ামী লীগের দুর্নীতি একটি ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি ছিল যা:
- একটি সম্পূর্ণ জাতির প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে
- একটি লুটতরাজমূলক রাজবংশ সৃষ্টি করেছে
- রাষ্ট্রীয় সহিংসতা স্বাভাবিক করেছে
- একটি প্রজন্মকে ঋণে বন্দী করেছে
- দুর্নীতিকে বৈজ্ঞানিক এবং পরিকল্পিত করেছে
পার্থক্য:
- বিএনপি বর্তমান থেকে চুরি করেছে
- আওয়ামী লীগ ভবিষ্যৎ বন্ধক রেখেছে
উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা:
বিএনপির বিরুদ্ধে:
- মানি লন্ডারিং-এর নথিভুক্ত FBI প্রমাণ
- দাতব্য তহবিল আত্মসাতের দোষী সাব্যস্ত
- হাওয়া ভবনের মাধ্যমে চাঁদাবাজি প্রমাণিত
- সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র চোরাচালান
- রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর গ্রেনেড হামলা
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে:
- পরিকল্পিত ব্যাংকিং খাত গণহত্যা
- ছয় মহাদেশ জুড়ে পারিবারিক সম্পদ সঞ্চয়
- $২৩৪ বিলিয়ন কথিত মানি লন্ডারিং
- ১,৯২৬ বিচারবহির্ভূত হত্যা
- ৪০২ জোরপূর্বক অপহরণ
- ২০২৪ অভ্যুত্থানে ১,০০০+ ছাত্র নিহত
- সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক ধ্বংস
বর্তমান অবস্থা (২০২৪-২০২৫):
বিএনপি নেতারা:
- খালেদা জিয়া: হাসিনার পতনের পরে বেশিরভাগ মামলা খারিজ
- তারেক রহমান: ৮৪টি মামলা বিচারাধীন, ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসনে থাকেন
আওয়ামী লীগ নেতারা:
- শেখ হাসিনা: তার পতনের পর ২৩৩টি মামলা দায়ের
- মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড (১৭ নভেম্বর ২০২৪)
- পূর্বাচল ভূমি দুর্নীতির জন্য ২১ বছর (২৭ নভেম্বর ২০২৪)
- বর্তমানে ভারতে, ভারত প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করছে
- সজীব ওয়াজেদ জয়: তদন্তাধীন
- টিউলিপ সিদ্দিকী: দুর্নীতি কেলেঙ্কারির মধ্যে ইউকে সংসদ থেকে পদত্যাগ
উপসংহার: ক্ষমতার আসল চেহারা
এটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নয়। এটি একটি অপরাধ তথ্যচিত্র।
১৫ বছর ধরে (২০০৯-২০২৪), বাংলাদেশের মানুষ একটি পরিশীলিত অপরাধী এন্টারপ্রাইজের অধীনে বাস করেছে যা:
- গণতন্ত্রের মুখোশ পরেছিল
- উন্নয়নের ভাষা বলেছিল
- মুক্তিযুদ্ধের পতাকায় নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছিল
- এবং পরিকল্পিতভাবে তাদের $২৩৪ বিলিয়ন ডাকাতি করেছে
তার আগে ৫ বছর (২০০১-২০০৬), তারা একটি অসভ্য চাঁদাবাজি চক্রের অধীনে বাস করেছে যা:
- আদর্শের কোনো ভান করেনি
- ভয় এবং শক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল
- এবং $১-২ বিলিয়ন চুরি করেছে
প্রশ্ন ছিল: কোনটি খারাপ ছিল?
উত্তর হল:
একজন ছিল একজন ছিনতাইকারী যে রাস্তায় আপনাকে ডাকাতি করেছে।
অন্যজন ছিল একজন সার্জন যে আপনাকে সুস্থ করার ভান করার সময় আপনার অঙ্গ চুরি করেছে।
উভয়ই অপরাধী।
কিন্তু একজনের অপরাধ ১০০ গুণ বড় ছিল, অসীমভাবে আরও পরিশীলিত ছিল, এবং জাতির ভবিষ্যতের জন্য ধ্বংসাত্মকভাবে আরও ক্ষতিকারক ছিল।
পোস্ট-স্ক্রিপ্ট: পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যা
$২৩৪ বিলিয়ন বাংলাদেশের জন্য কী করতে পারত?
- ২০০+ পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারত
- সম্পূর্ণ জাতির জন্য ২০ বছরের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারত
- প্রতিটি পরিবারকে $১,৪০০ দিতে পারত
- প্রতিটি জেলায় বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করতে পারত
- সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিকীকরণ করতে পারত
- লাখো চাকরি সৃষ্টি করতে পারত
- চরম দারিদ্র্য দূর করতে পারত
পরিবর্তে:
- একটি পরিবার বৈশ্বিক সম্পত্তি সংগ্রহ করেছে
- ব্যবসায়িক সমষ্টি অলিগার্চ হয়ে উঠেছে
- ব্যাংকিং সিস্টেম ভেঙে পড়েছে
- ছাত্রদের রাস্তায় গুলি করা হয়েছে
- মানুষ চিহ্ন ছাড়া নিখোঁজ হয়েছে
- একটি জাতির ভবিষ্যৎ চুরি হয়েছে
এটি রাজনীতি নিয়ে নয়। এটি অপরাধ নিয়ে। ইতিহাস উভয় দলকে অপরাধী এন্টারপ্রাইজ হিসাবে মনে রাখবে। কিন্তু ইতিহাস এটাও লক্ষ্য করবে কোন অপরাধ বড় ছিল—উদ্দেশ্যে নয়, বরং মাপকাঠি, পরিশীলিততা এবং লাখো জীবনে ধ্বংসাত্মক প্রভাবে।
রায় স্পষ্ট: উভয়ই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। একজন বিপর্যয়করভাবে আরও বেশি ছিল।
কেস স্টাডি সংকলিত উৎস: আদালতের নথি, দুদক তদন্ত, FBI সাক্ষ্য, বিশ্বব্যাংক রিপোর্ট, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ডেটা, GFI রিপোর্ট, সরকারি শ্বেতপত্র, মিডিয়া ডকুমেন্টেশন এবং সাক্ষী সাক্ষ্য (২০০১-২০২৫)
